আকাইদ (প্রথম অধ্যায়)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা | NCTB BOOK
1.1k
Summary

আকাইদ ( الْعَقَائِدُ ) একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ 'বিশ্বাসমালা'। এর একবচন 'আকিদাহ' (الْعَقِيْدَةُ), যা 'বিশ্বাস' নির্দেশ করে। ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের প্রতি বিশ্বাসকে 'আকাইদ' বলা হয়। এটি অন্তর্ভুক্ত করে:

  • আল্লাহ
  • নবি-রাসুল
  • ফেরেশতা
  • আসমানি কিতাব
  • আখিরাত
  • তকদির
  • পুনরুত্থান

এই অধ্যায় শেষে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর ধারণা দিতে পারব:

  • তাওহিদের ধারণা, তাৎপর্য ও গুরুত্ব
  • কালিমা তায়্যিবা ও কালিমা শাহাদাতের অর্থ ও উচ্চারণ
  • ইমান মুজমাল (ইমানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়) এর অর্থ ও উচ্চারণ
  • আল্লাহর কিছু গুণবাচক নামের ব্যাখ্যা
  • রিসালাতের ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা
  • আখিরাতের ধারণা, বিশ্বাসের গুরুত্ব ও পর্যায়সমূহ
  • নীতিমালার উন্নয়নে 'আকাইদ'-এর গুরুত্ব

আকাইদ ( الْعَقَائِدُ )

আকাইদ' আরবি শব্দ। এটি বহুবচন। এর অর্থ হলো বিশ্বাসমালা। এর একবচন হলো 'আকিদাহ' (الْعَقِيْدَةُ), যার অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের প্রতি বিশ্বাসকেই 'আকাইদ' বলা হয়। যেমন: আল্লাহ, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, আখিরাত, তকদির, পুনরুত্থান ইত্যাদির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

  • আকাইদের ধারণা বর্ণনা করতে পারব।
  • তাওহিদের (একত্ববাদ) ধারণা, তাৎপর্য ও তাওহিদে বিশ্বাসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • অর্থসহ কালিমা তায়্যিবা ও কালিমা শাহাদাত শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে, বলতে ও ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ইমান মুজমাল (ইমানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়) অর্থসহ শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে, বলতে ও ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • আল্লাহর কতিপয় গুণবাচক নামের অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • রিসালাতের ধারণা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • আখিরাতের ধারণা, বিশ্বাসের গুরুত্ব ও পর্যায়সমূহ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • নৈতিকতা উন্নয়নে 'আকাইদ'-এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারব।
Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

সামিয়া সবসময় বই নিয়ে পড়তে বসে। বরাবরই শ্রেণিতে সে প্রথম স্থান অধিকার করে। তার স্বপ্ন, সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে এবং গরিব ও অসহায় রোগীদের সেবাযত্ন করবে।

উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

ফরিদ সাহেব একজন ধার্মিক লোক। তিনি ইমান ও ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের প্রতি দৃঢ় আস্থা পোষণ করেন।

শরিয়ত ও মারেফাত
ইমান ও আমলের
শরিয়ত ও আনুগত্যের
আকাইদ ও বিশ্বাসের
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

মি. ক ও খ দু'জনেই ব্যবসায়ী। মি. ক মনে করেন ইহকালই মানুষের শেষ তাই তিনি সম্পদ উপার্জনের জন্য হালাল হারামের তোয়াক্কা করেন না। অপরদিকে মি. খ মনে করেন ইহজীবনই মানুষের শেষ নয় বরং মৃত্যুর পরে তাকে প্রতিটি কর্মের হিসাব দিতে হবে।

তাওহিদ (التَّوْحِيدُ) (পাঠ ১)

201

তাওহিদের ধারণা
তাওহিদ ( تَوْحِيدٌ )আরবি শব্দ। বাংলা ভাষায় একে বলা হয় একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে বিশ্বাস করাকে তাওহিদ বা একত্ববাদ বলা হয়। আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা। তিনি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। তিনিই হলেন একমাত্র ইলাহ। তিনি সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। আল্লাহ তায়ালার প্রতি এরূপ বিশ্বাসই হলো তাওহিদ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ اللَّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدُ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

অর্থ: বলুন, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন (সকলেই তার মুখাপেক্ষী)। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ১-৪)

আল্লাহ তায়ালার পরিচয়
আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি সত্তাগতভাবে যেমনি একক, তেমনি গুণাবলিতেও তুলনাহীন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ একক সত্তা। তার কোনো সমকক্ষ নেই। তিনি কারো সন্তান নন। আবার কেউ তার সন্তানও নয়। গুণাবলির দিক থেকেও মহান আল্লাহ অদ্বিতীয়। তিনি সকল গুণের আধার। তিনি চিরস্থায়ী, চিরঞ্জীব, শাশ্বত ও সত্য। তিনি সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা, পুরস্কারদাতা, শাস্তিদাতা ইত্যাদি। তিনি 'লা-শারিক'। তার সমান বা সমকক্ষ কেউ নেই। তার গুণাবলির সাথে কোনো কিছুরই তুলনা করা যায় না। তার তুলনা একমাত্র তিনি নিজেই।

তাওহিদের তাৎপর্য
আমরা আমাদের চারপাশে নানারকম জিনিস দেখতে পাই। সুন্দর সুন্দর ফুল, ফল, গাছপালা, তরুলতা, পশুপাখি ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে নদীনালা, পাহাড়, পর্বত, বন, জঙ্গল, সাগর, মহাসাগর। আরও আছে বিশাল আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি। আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না এমন অনেক বস্তু এবং প্রাণীও রয়েছে। এসব কিছুই সৃষ্টিজগতের অন্তর্গত। এগুলো সৃষ্টিকর্তা ছাড়া নিজ থেকে সৃষ্ট হয়নি। নিশ্চয়ই একজন স্রষ্টা এগুলো সৃষ্টি করেছেন। তিনি হলেন মহান আল্লাহ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তার কোনো সাহায্যকারীর প্রয়োজন হয়নি। তিনি 'হও' (কুন) বলার সাথে সাথেই সবকিছু সৃষ্টি হয়ে যায়।
বিশ্বজগতের সবকিছুই তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি প্রয়োগ করে এগুলো থেকে উপকার লাভ করে। সুতরাং মানুষের উচিত তার স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এক আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য ও ইবাদত করা। তার ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করা যাবে না। এভাবে মহান আল্লাহর তাওহিদ বা একত্ববাদের প্রতি অনুগত হলে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে কল্যাণ ও সফলতা লাভ করতে পারে।
তাওহিদে বিশ্বাসের গুরুত্ব
তাওহিদ বা আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাস আকাইদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইমান ও ইসলামের মূলভিত্তি হলো তাওহিদ। তাওহিদে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না। সকল নবি-রাসুল (আ.) তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন। সকলেই ঘোষণা করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তার তুল্য কিছুই নেই। তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করে। আর তাওহিদে বিশ্বাসীগণ আখিরাতে জান্নাত লাভ করবেন।

তাওহিদে বিশ্বাসের উদাহরণ
আমরা সকলেই হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর নাম শুনেছি। তিনি ছিলেন একজন নবি ও রাসুল। তিনি এক মূর্তিপূজক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মন্দিরের পুরোহিত। তাঁর সময়ের লোকজন আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বা তাওহিদে বিশ্বাস করত না। বরং তারা মূর্তিপূজা করত। তাদের রাজা নমরূদের উপাসনা করত। হযরত ইবরাহিম (আ.) এসব করতেন না। তিনি ভাবলেন মূর্তি বা নমরূদ কোনো কিছুর স্রষ্টা হতে পারে না। কেননা এগুলো নিজেরাই ধ্বংসশীল। সুতরাং এদের উপাসনা করা ঠিক নয়।
এভাবে তিনি স্রষ্টা সম্পর্কে চিন্তা করতে লাগলেন। প্রথমে তিনি ভাবলেন যে আকাশের তারকা, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি হয়তো মানুষের সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু এগুলো একে একে অদৃশ্য হয়ে গেলে তিনি বুঝতে পারলেন যে এগুলো মানুষের স্রষ্টা বা ইলাহ নয়। কেননা এগুলো কোনোটাই স্থায়ী নয়। এরা অস্ত যায়, অদৃশ্য হয়। বরং এ সবকিছু যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন তিনিই ইলাহ, তিনিই মাবুদ। অতঃপর তিনি সেই অদৃশ্য সত্তার প্রতি ইমান আনলেন ও তাওহিদে বিশ্বাস স্থাপন করলেন। এভাবে বিশ্বজগতের নানা সৃষ্টির প্রতি লক্ষ্য করে হযরত ইবরাহিম (আ.) মহান আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য প্রদান করলেন।
অতএব, তাওহিদ অর্থ একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালা তার সত্তা ও গুণাবলিতে এক ও অদ্বিতীয়। আমরা তাওহিদে বিশ্বাস করব এবং সে অনুযায়ী আমল করব। আল্লাহ তায়ালার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করব না।
তাওহিদের শিক্ষা
আকাইদের সর্বপ্রথম ও প্রধান বিষয় হলো তাওহিদ। তাওহিদ অর্থ আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করা, তার সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। তাওহিদ থেকে আমরা নিম্নলিখিত শিক্ষা লাভ করতে পারি:

১. আমরা আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করবো এবং তার সাথে কাউকে শরিক করবো না।
২. আমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করবো, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদাত করবো না।
৩. আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীর সবকিছু তিনি আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য আমরা সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবো।
৪. আল্লাহ তায়ালা বিপদ-আপদ থেকে একমাত্র মুক্তিদাতা। সুতরাং বিপদ-আপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা সবসময় আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবো।
৫. আমরা আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ জানবো ও সেইসব নামে তাকে ডাকব এবং আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়ার চেষ্টা করবো।
৬. আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবসময় দেখছেন এবং আমাদের সকল কাজের হিসাব রাখছেন। সুতরাং আমরা সর্বদা ভালো কাজ করবো এবং অন্যায়, অত্যাচার ও সর্বপ্রকার পাপ কাজ থেকে দূরে থাকব।

কাজ: শ্রেণির সব শিক্ষার্থী দুই দলে ভাগ হয়ে যাবে। একদল তাওহিদের পরিচয় ও তাৎপর্য সম্পর্কে বলবে। অন্যদল একটি উদাহরণের মাধ্যমে তাওহিদে বিশ্বাসের গুরুত্ব সম্পর্কে বলবে।
Content added By

কালিমা তায়ি‍্যবা (كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ ) (পাঠ ২)

427

لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই, মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল।

তাৎপর্য
কালিমা তায়্যিবা অর্থ হলো পবিত্র বাক্য। এটি তাওহিদ, ইমান ও ইসলামের মূলভিত্তি। এ কালিমা স্বীকার না করলে কেউ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। এ কালিমার দুটি অংশ।

প্রথম অংশ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ( লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ )

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই। অর্থাৎ পৃথিবীতে ইলাহ বা ইবাদতের যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি ব্যতীত আর কেউ উপাস্য হতে পারে না। চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, পাহাড়, পর্বত, বাঘ-সিংহ, রাজা-বাদশাহ কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। বরং এসবের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালাই হলেন একমাত্র মাবুদ। তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত বা উপাসনা করা যাবে না। এমনকি তার ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করাও যাবে না। আরবি 'লা-ইলাহা' শব্দের অর্থ কোনো ইলাহ নেই; আর 'ইল্লাল্লাহ' অর্থ আল্লাহ ছাড়া। কালিমার এ অংশটি না-বোধক শব্দ দ্বারা শুরু করা হয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোনো পাত্রে ভালো কিছু নেওয়ার আগে প্রথমে ঐ পাত্রটি খালি করে ফেলি। যেন ঐ জিনিসটি অন্য কিছুর সাথে মিশ্রিত না হয়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে। যেমন: একটি গ্লাসে পানি রয়েছে। তুমি যদি ঐ গ্লাসে দুধ নিতে চাও তাহলে কী করবে? প্রথমে গ্লাসের পানিটুকু ফেলে দেবে। তাই না? এরপর খালি গ্লাসে দুধ নেবে। গ্লাসে পানি রেখে দিয়ে তাতে দুধ নিলে দুধ আর পানি মিশ্রিত হয়ে যাবে। ফলে দুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। তদ্রূপ তাওহিদে বিশ্বাসের জন্য প্রয়োজন পবিত্র অন্তর। অর্থাৎ প্রথমে অন্তর থেকে সবরকমের ভুল ও ভ্রান্ত বিশ্বাস দূর করতে হবে। 'লা-ইলাহা' দ্বারা এটাই করা হয়। অতঃপর 'ইল্লাল্লাহু' দ্বারা আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা হবে।
আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) যখন মক্কা নগরীতে ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন আরবের লোকেরা ছিল মূর্তিপূজক। তারা নানারূপ মূর্তি, গাছপালা, চন্দ্র, সূর্য, পাহাড়, পর্বত ইত্যাদির পূজা করত। এজন্য রাসুল (স.) এ কালিমার দাওয়াত দেন। ফলে আরবের লোকজন মূর্তিপূজা থেকে অন্তরকে পরিষ্কার করে আল্লাহ পাকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।

দ্বিতীয় অংশ : مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللَّهِ (মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ)

অর্থ: মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল। অর্থাৎ মুহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবি ও রাসুল। এ কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন ইমানের অংশ। কালিমা তায়্যিবার প্রথম অংশের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা যেমন জরুরি, দ্বিতীয় অংশের প্রতি ইমান আনাও তেমনই আবশ্যক। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসের পাশাপাশি মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কেননা তাঁর মাধ্যমেই আমরা আল্লাহ পাকের পরিচয় লাভ করি। তিনিই আমাদের নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। ভালোমন্দ, সত্য, মিথ্যা ইত্যাদি তিনিই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। আর এসব তিনি নিজ থেকে শিক্ষা দেননি। বরং মহান আল্লাহর নির্দেশেই শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করব যে, হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা। তিনি নবি ও রাসুল। তিনি যে বাণী নিয়ে এসেছেন তা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। যাতে রয়েছে মানুষের জীবন পরিচালনার যথার্থ বিধিবিধান।
কালিমা তায়্যিবা ইমানের মূলভিত্তি। অতএব, আমরা শুদ্ধভাবে এ কালিমা পড়ব। এর অর্থ বুঝে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করব এবং এর মর্মানুসারে জীবনের সকল কাজ পরিচালনা করব।

কাজ ঃ শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে বাড়ি থেকে বড় একটি কাগজে 'কালিমা তায়ি‍্যবা' অর্থসহ লিখে একটি পোস্টার তৈরি করে নিয়ে আসবে এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
Content added By

কালিমা শাহাদাত ( كَلِمَةُ ) (পাঠ ৩)

3.6k

أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

উচ্চারণ: আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (স.) তার (আল্লাহর) বান্দা ও রাসুল।

তাৎপর্য
কালিমা শাহাদাত হলো- সাক্ষ্যদানের বাক্য। অর্থাৎ এ কালিমা দ্বারা ইমানের সাক্ষ্য দেওয়া হয়। আমরা এ কালিমা উচ্চারণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও মুহাম্মদ (স.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের রব। তিনি আমাদের রিজিক দেন, প্রতিপালন করেন, সুস্থতা দান করেন। তিনি আমাদের নানারূপ নিয়ামত দান করেন। আলো, বাতাস, পানি, খাদ্য, সবকিছুই তার দান। সুতরাং আমাদের উচিত তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। অপরদিকে হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবি ও রাসুল। তিনিই আমাদের নিকট আল্লাহ পাকের পরিচয় তুলে ধরেছেন। সত্য, মিথ্যার পার্থক্য শিখিয়েছেন। জান্নাতে যাওয়ার দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। সুতরাং সকল কাজে তার আনুগত্য করা এবং তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করাও অত্যাবশ্যক।
কালিমা শাহাদাতের মাধ্যমে আমরা এ দুটো কাজই করতে পারি। তাছাড়াও মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতি আমাদের বিশ্বাসের প্রমাণ দিতে পারি।
কালিমা তায়্যিবার ন্যায় কালিমা শাহাদাতও দুটি অংশে বিভক্ত। যথা-

প্রথম অংশ : أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ (আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু)

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই।

এ কথার দ্বারা তাওহিদ বা একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ আমরা এর দ্বারা সাক্ষ্য দেই যে, মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি তার সত্তা ও গুণাবলিতে একক। তার কোনো শরিক বা সমতুল্য নেই। ইবাদতের ক্ষেত্রে আমরা কাউকে তাঁর শরিক করি না।
দ্বিতীয় অংশ : وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ (ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু)
অর্থ: আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (স.) তার বান্দা ও রাসুল।
কালিমার এ অংশ দ্বারা মুহাম্মদ (স.)-এর রিসালাতের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অর্থাৎ আমরা স্বীকার করি যে, হযরত মুহাম্মদ (স.) আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবি ও রাসুল। তিনি নিজে আল্লাহ নন কিংবা আল্লাহর অংশও নন। বরং তিনি হলেন আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা। তিনিও আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতেন।

তবে তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তিনি আল্লাহ তায়ালার মনোনীত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল। তিনি আল্লাহ তায়ালার বাণী আমাদের নিকট পৌছিয়েছেন।
কালিমা শাহাদাত ইমানের অন্যতম প্রধান বাক্য। এর দ্বারা মানুষ নিজ ইমানের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। সুতরাং আমরা শুদ্ধভাবে এ কালিমা পড়ব এবং এর মর্মার্থ অনুসারে আমল করব।]

কাজ: শিক্ষার্থীরা একে অপরকে কালিমা শাহাদাত অর্থসহ মুখস্থ শোনাবে।
Content added By

ইমান মুজমাল (إِيمَانَّ ) (পাঠ ৪)

317

امَنْتُ بِاللهِ كَمَا هُوَ بِأَسْمَائِهِ وَصِفَاتِهِ وَقَبِلْتُ جَمِيعَ أَحْكَامِهِ وَأَرْكَانِهِ -

উচ্চারণ: আমানতু বিল্লাহি কামা হুয়া বি আসমাইহি ওয়া সিফাতিহি ওয়া কাবিলতু জামি'আ আহকামিহি ওয়া আরকানিহি।
অর্থ: আমি 'ইমান' আনলাম আল্লাহর উপর, ঠিক তেমনি যেমন আছেন তিনি, তার সকল নাম ও গুণসহ। আর আমি তাঁর সকল হুকুম ও বিধিবিধান গ্রহণ করে নিলাম।
তাৎপর্য
'ইমান' শব্দের অর্থ বিশ্বাস। আর 'মুজমাল' অর্থ সংক্ষিপ্ত। অতএব, ইমান মুজমাল অর্থ সংক্ষিপ্ত বিশ্বাস। সংক্ষেপে আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও আনুগত্য স্বীকার করাকে ইমান মুজমাল বলা হয়। এ বাক্য দ্বারা আমরা পুরোপুরিভাবে আল্লাহ তায়ালার কর্তৃত্ব ও বিধান স্বীকার করে থাকি।
আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি অতুলনীয়। কোনো কিছুই তার তুল্য নয়। আবার তার ন্যায়ও অন্য কিছু নেই। তার সত্তা ঠিক তারই মত। কোনো মানুষ তার সত্তা, আকার আকৃতির কল্পনা করতে পারে না। তিনি যেমন আছেন সেরূপই তাকে বিশ্বাস করতে হবে। তার সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। তিনি সকল গুণের অধিকারী। সবরকম গুণ তার মধ্যে পূর্ণমাত্রায় রয়েছে। এসব নাম ও গুণের প্রতি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে।
মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি নানা আইন-কানুন প্রদান করেছেন। নবি-রাসুলগণ এগুলো মানুষের নিকট পৌঁছিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার দেওয়া এসব বিধিবিধান মানুষকে সফলতা ও মুক্তি দান করে। এগুলো অনুসরণ করলে, মেনে চললে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি পাওয়া যায়। সুতরাং আমরা সর্বদা তার আদেশগুলো মেনে চলব। যেসব কাজ থেকে মহান আল্লাহ আমাদের নিষেধ করেছেন সেসব কাজ বর্জন করব।

আমরা ইমান মুজমাল শুদ্ধরূপে পড়ব। এর অর্থ বুঝে আন্তরিকভাবে তা স্বীকার করব। আর জীবনের সর্বাবস্থায় এবং সকল কাজে আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলব।

কাজ: শিক্ষার্থীরা একে অপরকে ইমান মুজমাল অর্থসহ মুখস্থ শোনাবে এবং তা নিজেদের খাতায় লিখে একে অপরকে দেখাবে।
Content added By

আল-আসমাউল হুসনা (الْأَسْمَاءُ الْحُسْنی) (পাঠ ৫)

783

আল-আসমাউল হুসনা আরবি শব্দ। আল-আসমা শব্দের অর্থ নামসমূহ। আর হুসনা অর্থ সুন্দরতম। অতএব, আল-আসমাউল হুসনা অর্থ সুন্দরতম নামসমূহ। আল্লাহ তায়ালার সুন্দর সুন্দর নামকে একত্রে আল-আসমাউল হুসনা বলা হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا

অর্থ: "আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব, তোমরা তাকে সেই সব নামেই ডাকবে।” (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ১৮০)
আল্লাহ তায়ালা সকল গুণের আধার। যেমন: তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, ক্ষমাশীল, দয়াবান, ধৈর্যশীল, সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, প্রতিপালক ইত্যাদি। এমন কোনো গুণ নেই যা তার মধ্যে নেই। এসব গুণের প্রত্যেকটির পৃথক পৃথক নাম রয়েছে। এগুলো হলো গুণবাচক নাম। গুণবাচক এসব নামই আল-আসমাউল হুসনা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাকের অনেক গুণবাচক নামের উল্লেখ আছে। আমরা আল্লাহ পাকের ৯৯টি (নিরানব্বইটি) গুণবাচক নামের কথা জানি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, মহান আল্লাহর গুণবাচক নামের কোনো শেষ নেই। এগুলো অসংখ্য। তবে বেশি উল্লেখযোগ্য হলো এ নিরানব্বইটি নাম।
এসব নাম আল্লাহ তায়ালার পরিচয় প্রকাশ করে। যেমন: আল্লাহু খালিক। খালিক অর্থ সৃষ্টিকর্তা বা স্রষ্টা। সুতরাং আমরা এ নাম দ্বারা বুঝতে পারি যে, এ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা হলেন মহান আল্লাহ। এভাবে গুণবাচক নামসমূহ দ্বারা আমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভালোভাবে চিনতে পারি। ফলে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা সহজ হয়। আল্লাহ তায়ালার এসব গুণ আমরা অনুশীলন করব। এতে আমাদের চরিত্র সুন্দর হবে। সকলেই আমাদের ভালোবাসবে। আল্লাহ তায়ালাও আমাদের ভালোবাসবেন।

আল্লাহু মালিক ( اللَّهُ مَالِكٌ )
আল্লাহ তায়ালা সকল কিছুর মালিক। মালিক অর্থ অধিকারী। তিনি আসমান জমিন, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, পাহাড়, পর্বত, গাছপালা, নদী, সাগর সবকিছুর অধিপতি। সকল কিছুই তার নির্দেশে পরিচালিত হয়। কোনো কিছুই তার আদেশ লঙ্ঘন করে না। পশুপাখি, কীটপতঙ্গের মালিকও তিনিই। পৃথিবীতে বড়ো-ছোটো সকল বস্তুই তার মালিকানার অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তায়ালা মানুষেরও মালিক। আমাদের জীবন-মৃত্যু তারই নিয়ন্ত্রণে। আমাদের ধনসম্পদ, সোনারুপা সবকিছুর প্রকৃত মালিকও তিনিই। পৃথিবীতে আমরা তার প্রতিনিধি। এ হিসেবে আমরা ধনসম্পদের আমানতদার মাত্র। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত ও পরকালের মালিক। জান্নাত-জাহান্নাম তারই অধিকারে। শেষ বিচারের দিনের মালিকও তিনিই। এক কথায় বিশ্বজগতে যা কিছু আছে সবকিছুরই মালিক হলেন মহান আল্লাহ।
আল্লাহ্র কারিম (اللهُ كَرِيمٌ )
কারিম আরবি শব্দ। এর অর্থ দয়াময়, মহানুভব, উদার ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালা অতীব মহান, করুণাময়। উদারতা, দয়া, মায়া, স্নেহ, সহনশীলতা, ঔদার্য, ক্ষমা ইত্যাদি গুণাবলি পরিপূর্ণভাবে তার সত্তায় বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ অসীম তাই তার মায়া, ক্ষমা, সহনশীলতা ইত্যাদি সীমাহীন। আমাদের কেউ কাউকে দয়া দেখালে, ক্ষমা করলে, আমরা ঐ ব্যক্তিকে কতইনা মহান ভাবি। আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে তার গুণগান করি। কিন্তু মহান আল্লাহ যে কত বড় দয়াময়, উদার, ক্ষমাশীল তা আমরা অনুমানও করতে পারি না। কেননা তিনি তো মহামহিম অসীম সত্তার অধিকারী। তিনি সকল সৃষ্টির প্রতিই উদার ও মহানুভব। আলো, বাতাস, পানি, চন্দ্র, সূর্য, জীবজন্তু, পাহাড়, নদী, আসমান জমিন সবই আল্লাহর নিয়ামত। বিনিময় প্রত্যাশা ছাড়া উদারভাবে অকাতরে তিনি সকলের প্রতি নিয়ামত বিতরণ করেন। তার মহানুভবতার কোনো সীমা নেই। তার এ অসীম এবং অফুরন্ত দয়া, মায়া ও উদারতার জন্য সকলকে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত, শোকর আদায় করা উচিত।
মহান আল্লাহর গুণবাচক নামের অনুসরণে আমরাও অন্যের প্রতি উদার ও দয়াপূর্ণ আচরণ করব। কথায়, কাজে বাস্তব জীবনে মহানুভব হবো।

আল্লাহ্ আলিম ( اللَّهُ عَلِيمٌ )
আলিম আরবি শব্দ। এর অর্থ সর্বজ্ঞ অর্থাৎ যিনি সবকিছু জানেন বা যিনি সকল জ্ঞানের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা হলেন আলিম। তিনি সকল জ্ঞানের আধার, তার জ্ঞান অসীম। তার জ্ঞানের পরিমাপ করা যায় না। কোনো কিছুই তার জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আসমান জমিনের সবকিছুর খবরই জানেন। আমাদের সকল কথাবার্তা, কাজকর্ম তিনি জানেন। এমনকি আমরা অন্তরে যা চিন্তা করি তিনি সেগুলোও জানেন। আমরা যা কল্পনা করি বা স্বপ্ন দেখি সেগুলোও তার জানার বাইরে নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-

وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

অর্থ: " অন্তরে যা আছে আল্লাহ সে সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত।" (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৫৪)
আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান সীমাহীন। তার জ্ঞানকে কেউই ফাঁকি দিতে পারে না। ক্ষুদ্র পিপীলিকার সমস্ত খবরও তার জানা। সমুদ্রের তলদেশে কিংবা মহাশূন্যে কোথায় কী হচ্ছে সবই তিনি জানেন। মোটকথা সবই তার জ্ঞানের আওতাধীন। সুতরাং আমরা সবসময় এ কথা মনে রাখব। আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন এমন কোনো কাজ করব না।

আল্লাহ্ হাকিম ( اللهُ حَكِيمٌ )
হাকিম আরবি শব্দ। এর অর্থ প্রজ্ঞাময়, হিকমতের অধিকারী, সুবিজ্ঞ, সুনিপুণ কর্মদক্ষ। মহান আল্লাহর গুণবাচক নাম হিসেবে হাকিম অর্থ আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়, সুদক্ষ, সুনিপুণ ও হিকমতের মালিক। এই মহাবিশ্ব তিনি যেমন সর্বোত্তম দক্ষতার সাথে সৃজন করেছেন, তেমন মহা প্রজ্ঞা, সুনিপুণ ও সুদক্ষ কৌশলের সাথে আবহমানকাল থেকে পরিচালনা করছেন। আকাশের তারকারাজি, চন্দ্র, সূর্য, মেঘমালা, নদনদী, আলো, বাতাস, আগুন, পানি, ফুল, ফল, বৃক্ষ-লতা, আসমান-জমিন, জীবনমরণ, স্বাদ-গন্ধ ও রূপ-রস যে দিকেই আমরা তাকাই সর্বত্রই এক সুন্দর সুনিপুণ কৌশল দেখতে পাই। তাইতো মহান আল্লাহ বলেন,
"যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না; তুমি আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?" (সূরা আল-মুল্ক, আয়াত: ৩)

মহান আল্লাহর মহা প্রজ্ঞার নিদর্শন দেখে আমরা তার প্রতি সুদৃঢ় ইমান আনব, শ্রদ্ধায় বিনম্রভাবে তাকে স্মরণ করব। সমগ্র সৃষ্টিকুলের মধ্যে যে প্রজ্ঞা ও হিকমত বিদ্যমান তা উপলব্ধি করে নিজেরা চিন্তাশীল হবো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চায় উৎসাহী হবো। খাঁটি ইমানদার হওয়ার পাশাপাশি অনুসন্ধিৎসু বিজ্ঞানমনস্ক হবো। আমাদের লেখাপড়া ও দৈনন্দিন কাজকর্ম গুছিয়ে সুশৃঙ্খল-সুনিপুণভাবে সময়ানুবর্তী হয়ে সমাপন করতে চেষ্টা করব। তাতে আমাদের জীবন সার্থক ও সফল হবে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা আল্লাহর চারটি গুণবাচক নাম উল্লেখ করে প্রত্যেকটির একটি করে শিক্ষা লিখে শ্রেণি শিক্ষককে দেখাবে।
Content added By

রিসালাত (الرَّسَالَةُ) (পাঠ ৬)

738

রিসালাত শব্দটি আরবি। এর অর্থ বার্তা, খবর, চিঠি বা সংবাদ বহন। রাসুলগণ যে কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করেন তাকে বলা হয় রিসালাত। আল্লাহ তায়ালা নবি-রাসুলগণকে নানা দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যেমন: মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে আহ্বান করা, সত্য দীন প্রচার করা, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, মহান আল্লাহর বাণী পৌছে দেওয়া ইত্যাদি। রাসুলগণের এ সকল দায়িত্বকে এক কথায় রিসালাত বলা হয়।

ইসলামি আকিদায় তাওহিদের পরই রিসালাতের স্থান। এক্ষেত্রে নবুয়ত ও রিসালাত প্রায় সমার্থক।
নবি-রাসুলগণের পরিচয়
নবি-রাসুলগণ হলেন মহান আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ বা মনোনীত বান্দা। নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁদের নির্বাচিত করেছেন। যিনি নবুয়তের দায়িত্ব পালন করেন তিনি হলেন নবি। আর রিসালাতের দায়িত্ব পালনকারীকে বলা হয় রাসুল।
নবি-রাসুলগণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ। তাঁরা কেউ আল্লাহর অংশ বা আল্লাহ তায়ালার পুত্র ছিলেন না। বরং মানুষের মধ্য থেকেই আল্লাহ পাক তাঁদের নির্বাচন করেছেন। তাঁরা বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা মা'সুম বা নিষ্পাপ ছিলেন। তাঁরা সর্বদা নেক ও ভালো কাজ করতেন। অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকতেন। তাঁরা উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
নবি-রাসুলগণ মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরেন। তাঁরা মানুষকে মহান আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন। মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের শিক্ষা দিতেন। তাঁরা মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী ও বিধান পৌঁছে দিতেন। আল্লাহ পাকের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে মানুষকে হাতেকলমে শিক্ষা দিতেন। তাঁরা সবসময় মানুষের কল্যাণ কামনা করতেন।
নবি-রাসুলের পার্থক্য
নবি ও রাসুলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যাঁদের নিকট আসমানি কিতাব এসেছিল তাঁরা ছিলেন রাসুল। আর যাঁদের নিকট কোনো আসমানি কিতাব আসেনি তাঁরা হলেন নবি। নবিরা পূর্ববর্তী রাসুলের প্রচারিত দীন (ধর্ম) প্রচার করতেন। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে অনেক নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই নবি-রাসুল এসেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِن قَبْلُ وَرُسُلًا لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ

অর্থ: অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি যাদের কথা ইতোপূর্বে অপনাকে বলেছি এবং অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি যাদের কথা আপনাকে বলিনি।" (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৪)

কুরআন মাজিদ বা কোনো নির্ভরযোগ্য হাদিসে তাঁদের সংখ্যা সুর্নিদিষ্ট করে বর্ণনা করা হয়নি। এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস রাখব, আল্লাহ তায়ালা যত নবি রাসুল পাঠিয়েছেন আমরা সবার ওপর ইমান রাখি। সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হযরত আদম (আ.)। আর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)। তাঁর পর দুনিয়াতে আর কোনো নবি আসেননি, আসবেনও না।

নবি-রাসুল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা
মহান আল্লাহ নানা কারণে মানুষের মধ্যে নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। নিম্নে এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো:

  • নবি-রাসুলগণ মানুষকে আল্লাহ পাকের পরিচয় জানিয়েছেন।
  • তাঁরা আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ও সত্য দীনের প্রতি আহবান করতেন।
  • ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদির পার্থক্য নবি-রাসুলগণই শিক্ষা দিতেন।
  • তাঁরা মানুষকে উন্নত ও উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিতেন।
  • তাঁরা মানুষকে জান্নাতে যাওয়ার পথ দেখাতেন। কীভাবে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা যায় সে শিক্ষা দিতেন।
  • তাঁরা মানুষের নিকট আসমানি কিতাবসমূহের বাণী পৌঁছে দিতেন।
  • হাতেকলমে মানুষকে আল্লাহ তায়ালার বিধান শিক্ষা দিতেন।

রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব
রিসালাতে বিশ্বাস করার গুরুত্ব অপরিসীম। তাওহিদের পরই রিসালাতের স্থান। রিসালাতে অর্থাৎ নবি- রাসুলগণকে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন হতে পারে না। কেননা নবি-রাসুলগণই আমাদের আল্লাহ তায়ালার পরিচয় জানিয়েছেন। তার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস না করলে আল্লাহ তায়ালা ও তার বাণীকে অস্বীকার করা হয়। অতএব, ইমানের অন্যতম অঙ্গ হচ্ছে রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
নবি-রাসুলগণ ছিলেন আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা ও প্রেরিত মানব। মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁদের প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহর প্রেরিত সব নবি-রাসুলের প্রতি আমরা ইমান আনব।
তাঁদের আনীত বাণীকে সম্মান করব। আর সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দেখানো পথে আমাদের জীবন পরিচালনা করব।

Content added By

আখিরাত ( اَلْآخِرَةُ ) (পাঠ ৭)

377

আখিরাত অর্থ পরকাল। মানুষের দুনিয়ার জীবনকে বলা হয় ইহকাল। আর ইহকালের পরের জীবনই হলো পরকাল। আরবিতে একে বলা হয় আখিরাত। মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে বলা হয় আখিরাত। এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। আখিরাতে মানুষ জান্নাতের শান্তি বা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে ।

আখিরাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব
তাওহিদ ও রিসালাতে বিশ্বাসের পরপরই আমাদেরকে আখিরাতে বিশ্বাস করতে হবে। আখিরাতে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন হতে পারবে না। আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে চরিত্রবান ও সৎকর্মশীল করে তোলে। কেননা যে ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে জানে আখিরাতে মানুষকে দুনিয়ার কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে। সেখানে দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে। যে ব্যক্তি ভালো কাজ করবে সে পুরস্কার লাভ করবে। তার স্থান হবে চিরশান্তির জান্নাত। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে পাপ ও অন্যায় কাজ করবে সে আখিরাতে শাস্তি ভোগ করবে। সে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। সুতরাং আখিরাতে বিশ্বাস করলে মানুষ ভালো কাজ করতে উৎসাহিত হয়, মন্দ কাজ করা থেকে বিরত থাকে। এভাবে আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালনা করে।
বলা হয়ে থাকে, 'দুনিয়া হলো আখিরাতের শস্যক্ষেত্র।' শস্যক্ষেত্রে মানুষ যেরূপ চাষাবাদ করে সেরূপ ফসল লাভ করে। যেমন কেউ ধান চাষ করলে ধান লাভ করে। গম চাষ করলে গম লাভ করে। তেমনি ভালো করে চাষাবাদ করলে ফসল বেশি লাভ করে। আর অলসতার কারণে চাষাবাদ না করে জমি ফেলে রাখলে সে কিছুই লাভ করে না। দুনিয়া ও আখিরাতের অবস্থাও ঠিক তেমন। আমরা যদি দুনিয়াতে ভালো কাজ করি, আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলি তাহলে আখিরাতে ভালো ফল লাভ করব। আর যদি নিজ ইচ্ছামতো চলাফেরা করি, অন্যায় ও পাপ কাজ করি তাহলে আমরা পরকালে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবো। সুতরাং পরকালের অনন্ত জীবনের জন্য দুনিয়াতেই আমাদেরকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
আখিরাতের পর্যায়সমূহ
আখিরাত বা পরকালের বেশ কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। যেমন: কবর, কিয়ামত ও হাশর।

কবর
পরকালীন জীবনের প্রথম ধাপ বা পর্যায় হলো কবর। একে 'আলমে বারযাখ'ও বলা হয়। মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে এ জীবনের শুরু হয়। এরপর কিয়ামত বা হাশর পর্যন্ত কবরের জীবন চলতে থাকে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَ مِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ

অর্থ: আর তাদের সামনে বারযাখ থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত (সূরা আল-মু'মিনূন, আয়াত: ১০০)
মৃত্যুর পর মানুষকে কাফন পরিয়ে কবরে রাখা হয়। এ সময় কবরে দুইজন ফেরেশতা আগমন করেন। তাঁদের নাম মুনকার-নাকির। তাঁরা মৃত ব্যক্তিকে তিনটি প্রশ্ন করেন। এগুলো হলো- তোমার রব কে? তোমার দীন কী? এবং তোমার নবি কে? যেসব লোকের কবর দেওয়া হয় না তারাও এ প্রশ্ন থেকে রেহাই পায় না।
দুনিয়ার জীবনে যারা আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাস করে এবং রাসুলের নির্দেশ মেনে চলে তারা এ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে। তাদের কবর হবে শান্তিময়। আর যারা দুনিয়াতে ইমান আনেনি, দীন মেনে চলেনি তারা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। তারা সে সময় শুধু আফসোস করবে। কবরের জীবন তাদের জন্য হবে অতি কষ্টদায়ক।

কিয়ামত
কিয়ামত অর্থ মহাপ্রলয়। পৃথিবীতে এমন একসময় আসবে যখন মানুষ আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে যাবে। দুনিয়াতে আল্লাহ বলার মতো কোনো লোক থাকবে না। সে সময় আল্লাহ পাক দুনিয়া ধ্বংস করে দেবেন। তাঁর নির্দেশে হযরত ইসরাফিল (আ.) শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। ফলে মহাপ্রলয় ঘটবে। এ দুনিয়ায় যা কিছু আছে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। পাহাড়, পর্বত তুলার ন্যায় আকাশে উড়তে থাকবে। পৃথিবীর নিচের সমুদয় ধনসম্পদ বের হয়ে আসবে। সবকিছু উলট-পালট হয়ে যাবে। কোনো প্রাণী বা বস্তু অবশিষ্ট থাকবে না। কেবল আল্লাহ তায়ালা থাকবেন। তিনি ব্যতীত আর কেউ বিরাজমান থাকবে না। এ অবস্থাকেই বলা হয় কিয়ামত বা মহাপ্রলয়।

হাশর
হাশর শব্দের অর্থ সমাবেশ, ভিড়, চাপ ইত্যাদি। কিয়ামতের পর বহুকাল একমাত্র আল্লাহ পাক বিদ্যমান থাকবেন। অতঃপর তিনি পুনরায় সমস্ত প্রাণীকে জীবিত করবেন। তার হুকুমে হযরত ইসরাফিল (আ.) দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। ফলে সকল প্রাণী পুনরায় জীবিত হবে। একে বলা হয় মৃত্যুর পর পুনরুত্থান। এ সময় একজন ফেরেশতা সবাইকে আহবান করবেন। ফলে সকলে একটি বিশাল ময়দানে সমবেত হবে। একে বলা হয় হাশর। আল্লাহ তায়ালা এখানে সকলের পাপপুণ্যের হিসাব নেবেন। সকল মানুষকে সে সময় আল্লাহ তায়ালার সামনে জবাবদিহি করতে হবে। সেদিন সূর্য মাথার অতি নিকটে থাকবে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ ঘামতে থাকবে। এমনকি অনেকে ঘামের মধ্যে সাঁতার কাটবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আরশের ছায়া ব্যতীত সেদিন অন্য কোনো ছায়া তথা আশ্রয়স্থল থাকবে না। ইমানদার পুণ্যবানগণ সেদিন আরশের ছায়াতলে স্থান লাভ করবেন। তাঁদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। আমলনামায় দুনিয়ার জীবনের সকল পাপপুণ্যের হিসাব লেখা থাকবে। পাপীরা বাম হাতে আমলনামা পাবে। এরপর আল্লাহ পাক মহাবিচার শুরু করবেন। এটিই হলো শেষ বিচারের দিন। এদিন মহান আল্লাহ হবেন একমাত্র বিচারক। নবি-রাসুল ও ফেরেশতাগণ এদিন সাক্ষী হবেন। মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোও এদিন সাক্ষ্য দান করবে। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এদিন তাঁর উম্মতদের জন্য সুপারিশ (শাফাআত) করবেন।
হাশরের ময়দানে মানুষের পাপপুণ্যের ওজন করা হবে। এটি সম্পন্ন হবে মিযান-এর মাধ্যমে। মিযান হলো পরিমাপক যন্ত্র। যাদের পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাঁরা জান্নাতের নানারকম নিয়ামত ভোগ করবেন। সেখানে তারা যা চাইবে তা-ই পাবে। যাদের মিযানে পাপের পাল্লা ভারী হবে তারা হবে জাহান্নামী। জাহান্নাম হলো ভীষণ কষ্টের স্থান। সেখানে তারা আগুনে দগ্ধ হবে। তবে কখনো মারা যাবে না। বরং কষ্ট ভোগ করতে থাকবে।
মৃত্যুর পরবর্তী অনন্ত জীবনই হলো আখিরাত। সেখানে মানুষের পাপপুণ্যের হিসাব নেওয়া হবে। পুণ্যবানগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর পাপীরা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। সুতরাং আমরা দুনিয়াতে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস করব। আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলব। ন্যায় ও সৎকাজ করব। তবেই পরকালে চিরশান্তির জান্নাত লাভ করতে পারব।

কাজ: শিক্ষার্থীরা আখিরাতের স্তরসমূহের একটি ধারাবাহিক তালিকা তৈরি করবে।
Content added By

আকাইদ ও নৈতিকতা (পাঠ ৮)

711

ইসলামের মূল বিষয়সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নামই আকাইদ। যেমন: তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত ইত্যাদি। আর নৈতিকতা হলো নীতির অনুশীলন। অর্থাৎ কথা ও কাজে উত্তম রীতিনীতির অনুশীলন করা, মার্জিত ও বিনয়ী হওয়া, উত্তম চরিত্রবান হওয়া ইত্যাদি। অন্যায়, অশ্লীল ও অশালীন বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করাও নৈতিকতার অন্তর্ভুক্ত।
নৈতিকতা ও নীতির অনুসরণ মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। নীতিহীন মানুষ পশুর সমান। পশুর কোনোরূপ নীতিবোধ নেই। সে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে। ভালোমন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ কোনো কিছুরই সে পরোয়া করে না। সে শুধু নিজের লাভ ও কল্যাণই বোঝে। নীতিহীন মানুষও ঠিক তেমনি। সে কোনোরূপ আইনকানুন, বিধিবিধান মানে না। সে নৈতিক আচরণ পালন করে না। বরং নিজের লাভের জন্য সে অপরের ক্ষতিসাধন করে থাকে। মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকা দেওয়া, পরচর্চা ইত্যাদি তার চরিত্রে ফুটে ওঠে। সমাজে সে নানারূপ অশান্তি সৃষ্টি করে। ফলে সমাজের কেউই তাকে বিশ্বাস করে না। কোনো মানুষই তাকে ভালোবাসে না।
অন্যদিকে নৈতিকতা মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে। নীতিবোধসম্পন্ন মানুষ সমাজে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা লাভ করে। সকলেই তাঁকে সম্মান করে।
আকাইদ ও নৈতিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আকাইদ বা ইসলামি বিশ্বাসসমূহ মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। যে ব্যক্তি আকাইদের বিষয়গুলো ভালোভাবে বিশ্বাস করে তার চরিত্র সুন্দর হয়। সে সবসময় নীতি ও উত্তম আদর্শের অনুসরণ করে। অন্যায়, অত্যাচার, অশ্লীলতা থেকে সে সর্বদা দূরে থাকে। সে কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। বরং সমাজ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে সে সচেষ্ট হয়।
আকাইদের প্রথম বিষয় হলো তাওহিদ। তাওহিদ হলো একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করা। তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা ও মালিক। তিনিই সকল ক্ষমতার অধিকারী ইত্যাদি বিশ্বাস করা। তাওহিদে এরূপ বিশ্বাসী ব্যক্তি কখনো অনৈতিক কাজ করতে পারে না। কেননা সে জানে যে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি তাকে সর্বদা দেখছেন এবং তার সকল কাজের হিসাব রাখছেন। সুতরাং সে সর্বদা আল্লাহ তায়ালার হুকুমমতো জীবনযাপন করে। অন্যায়, অত্যাচার ও পাপ কাজ থেকে দূরে থাকে।

তাওহিদের পরই আসে রিসালাত। রিসালাত হলো নবি-রাসুলগণের উপর বিশ্বাস। তাঁরা আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা। তাঁরা ছিলেন মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠজন। তাঁরা নিষ্পাপ ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। সুতরাং রিসালাতে বিশ্বাসী মানুষ নবি-রাসুলগণের চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাঁদের ন্যায় সেও উত্তম চরিত্র অনুশীলন করে। উদ্ধত ও অশালীন চলাফেরা ও কথাবার্তা তার থেকে কখনো প্রকাশ পায় না।

আখিরাতে বিশ্বাস আকাইদের অন্যতম অংশ। আখিরাত হলো পরকাল। মানুষের এ দুনিয়ার জীবনই শেষ নয়। বরং মৃত্যুর সাথে সাথে আরেক জীবনের শুরু হবে। এরই নাম আখিরাত। এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। এ জীবন অনন্ত ও চিরস্থায়ী। আখিরাতে মানুষের দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব নেওয়া হবে। দুনিয়াতে যে ভালো ও নেক কাজ করবে আখিরাতে সে চিরশান্তির জান্নাত লাভ করবে। আর দুনিয়ায় যে অন্যায় ও পাপ কাজ করবে আখিরাতে সে চরম শাস্তির মুখোমুখি হবে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। সুতরাং আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে দুনিয়ার জীবনে ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে। আখিরাতের সফলতা ও শান্তির আশায় মানুষ ভালো কাজ করে, সকলের সাথে মিলেমিশে চলে এবং উত্তম চরিত্রবান হয়। অন্যদিকে আখিরাতের শাস্তির ভয়ে মানুষ মন্দ ও অশ্লীল কাজ পরিত্যাগ করে। অন্যায়, অত্যাচার ও পাপ কাজ থেকে দূরে থাকে। এভাবে মানুষ আখিরাতে বিশ্বাসের ফলে নৈতিকতা অনুশীলন করে থাকে।
অতএব, নৈতিকতা অর্জনে আকাইদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভালোভাবে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস করব। দুনিয়াতে নৈতিকতার অনুশীলন করব, অনৈতিক কাজকে কখনোই পছন্দ করব না। তাহলে আমরা ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করব।

কাজ ঃ শ্রেণির সব শিক্ষার্থী মিলে তাদের মধ্য থেকে চারজন শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করবে। তারা প্রত্যেকে এই পাঠ থেকে কী শিক্ষা পেলো তা আলোচনা করবে আর অন্য সব শিক্ষার্থী শুনবে। পরিশেষে সবাই মিলে একটি তালিকা তৈরি করবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...